দখিনের খবর ডেস্ক ॥ সরকার দেশে ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিচ্ছে। ফলে দেশে কতসংখ্যক ইজিবাইক চলাচল করবে তা ঠিক করে দেবে সরকার। আর ঠিক করে দেয়ার সংখ্যার অতিরিক্ত ইজিবাইক আমদানি করা যাবে না। পাশাপাশি একজন ব্যক্তি একাধিক ইজিবাইকের মালিক হতে পারবে না। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে গঠিত কমিটি ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এসব সুপারিশ করে। আর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি কাজ করছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে কোনো ধরনের নিবন্ধন ছাড়াই ইজিবাইক চলাচল করছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে বাহনটি চালানো হচ্ছে। ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ কমিটি ওসব বাহনকে নিবন্ধনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) মাধ্যমে ‘সিলিং’ (কত সংখ্যক ইজিবাইক চলবে, তা নির্দিষ্ট করে) করে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। দেশে ইজিবাইকের সংখ্যা যেন নির্দিষ্ট থাকে, সেজন্য মালিকানার ক্ষেত্রেও সীমা বেঁধে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রস্তাব অনুযায়ী একজন ব্যক্তি একাধিক ইজিবাইকের মালিক হতে পারবে না। তবে কোনো মালিক বিদ্যমান ইজিবাইক বিক্রি করলে এবং ‘সিলিং’য়ের মধ্যে থাকলে তাকে আরেকটি ইজিবাইকের মালিকানা দেয়া হবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় যেমন ইজিবাইক চলাচল করছে, তেমনি বিভাগীয় শহর, জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও চলছে। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতেও ইজিবাইক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাতে প্রায়ই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কে বাড়ছে বিশৃঙ্খলা। এমন পরিস্থিতিতে ইজিবাইকের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়ার পাশাপাশি চলাচলের পরিধিও নির্দিষ্ট করে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় ও জেলা শহরের মধ্যে ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেয়া যাবে না। ওসব জায়গায় যেসব ইজিবাইক চলাচল করছে, পর্যায়ক্রমে সেগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। বাহনটি কেবল উপজেলা ও ইউনিয়নের সড়কেই চলাচলের জন্য অনুমতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশে ইজিবাইক উৎপাদন হয় না। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানি করে দেশে সংযোজন বা প্রস্তুত করা হয়। দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান বাহনটি প্রস্তুত কিংবা সংযোজন করবে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছ থেকে তাদের নিবন্ধন নিতে হবে। আর কাজটি করার ক্ষেত্রে ওসব প্রতিষ্ঠানকে বিআরটিএর কাছ থেকে মডেলভিত্তিক ‘টাইপ’ অনুমোদন করে নিতে হবে। তাছাড়া নিবন্ধনের পাশাপাশি ইজিবাইকের রুট পারমিটও দেবে সরকার। রুট পারমিটে নির্ধারিত এলাকা ছাড়া অন্য এলাকায় বাহনটি চলাচল করতে পারবে না। একই সাথে বাহনটির লাইফ লাইনও ঠিক করে ফেলা হবে। লাইফ লাইন ঠিক করে দেয়ার জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে গত ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট গঠিত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ‘সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক এবং এ জাতীয় অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে’র জন্য কমিটি ওসব সুপারিশ করে। সুপারিশগুলো গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৮তম সভায় উপস্থাপন করা হয়। একই দিন সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে আরেকটি কমিটি গঠন করে দেয়। ওই কমিটি বর্তমানে সুপারিশ বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ণয়ে কাজ করছে। অন্যদিকে সরকার ইলেকট্রিক মোটর নিবন্ধন ও চলাচলের জন্য যে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে ইলেকট্রিক মোটরযানের কাতারে ইজিবাইকও ঢুকে পড়তে পারে বিশেষজ্ঞরা মনে করছে। তাদের মতে, নীতিমালার খসড়ায় ৫ ধরনের যানবাহনকে ইলেকট্রিক মোটরযান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার একটি ধরন হলো থ্রি-হুইলার। সংজ্ঞা স্পষ্ট না করলে ওই থ্রি-হুইলার ক্যাটাগরির সুযোগ নিয়ে ইজিবাইকও ইলেকট্রিক মোটরযান হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ নেবে। আর তাা যদি হয় তাহলে বাহনটি নিয়ন্ত্রণ করা যেমন কঠিন হয়ে পড়বে, তেমনি রাস্তায় দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলাও বাড়বে। ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যক্রম চলছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়েই বিআরটিএ কাজটি করতে চায়।
Leave a Reply